বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের যোগ্যতা ও সকল খুঁটিনাটি বিষয়

- আপডেট সময় : ১০:৫২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
- / ২২ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি একটি ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় দেড় যুগ পর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সার্কুলার আসছে। BCS এর পূর্ণরূপ হচ্ছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (Bangladesh Civil Service)। এর মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রথম শ্রেণীর চাকরি ও আকর্ষণীয় বেতনের সুযোগ-সুবিধা থাকায় তরুণ তরুণীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে এই BCS।
তবে এটা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে প্রায় দেড় যুগেরও পরে শুধুমাত্র শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস সার্কুলার প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। এ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র সরকারি কলেজগুলোতে প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হবে ৬৮৩ জন এবং স্বাস্থ্য ক্যাডার অর্থাৎ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে ৩০৩০ জন।
সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত করা হয়েছিল ২০০৬ সালে। ২৬তম ওই সার্কুলারে সর্বমোট ১০৪৭ জন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময় থেকে অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারের সাথেই কলেজের প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে আসছে। অর্থাৎ একই সার্কুলারের মাধ্যমে অন্যান্য পদের সাথে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এই সকল শিক্ষা ক্যাডারে অনেক পদ শূন্য থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কয়েক দফায় একটি বিশেষ বিসিএসের আয়োজনের জন্য সুপারিশ করতে থাকেন।
খুব শীঘ্রই এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এমনকি কাজও শুরু করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের যোগ্যতা
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যখনই প্রকাশিত হোক না কেন এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রস্তুতির। কারণ আমি আগেই বলেছি প্রথম শ্রেণীর চাকরি এবং আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধার কারণে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত তাই নিজের জন্য জায়গা করতে প্রয়োজন শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়।
সরকারি কলেজে প্রভাষক পদে বিসিএসের মাধ্যমে যোগদানের জন্য অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষার পর ৪ বছর মেয়াদী অনার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। অনার্স, মাস্টার্স পরীক্ষায় রেজাল্ট নূন্যতম দ্বিতীয় শ্রেণী বা সমমানের জিপিএ থাকতে হবে। অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণীর বা সমমানের জিপিএ রেজাল্ট থাকলে আবেদন করা যাবে না।
তবে অন্যান্য সাধারন ক্যাডারগুলোতে একটি তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য। একটির বেশি পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী বা সমমানের জিপিও পেয়ে থাকলে আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
আবেদনের জন্য পূর্ববর্তী কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী বয়স সীমা সর্বোচ্চ ৩২ বছর পর্যন্ত।
উপরের যোগ্যতা ছাড়াও একজন দক্ষ প্রভাষক হওয়ার জন্য অবশ্যই ন্যায়পরায়ণতা থাকতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই শিক্ষকের কথা বুঝতে পারে। একই সাথে সর্বদা মানদন্ড বজায় রেখে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবচিত্র এবং চারপাশের ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা একজন আদর্শ শিক্ষকের যোগ্যতা।
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে (BCS Education Cadre) নিয়োগপ্রাপ্ত একজন প্রভাষক কি ধরনের কাজ করে থাকেন
প্রিলি, লিখিত, ভাইবা ইত্যাদি ধাপ পার হওয়ার পর যখন চূড়ান্তভাবে কেউ নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর প্রার্থীকে একটি সরকারি কলেজে পোস্টিং দেওয়া হয়। উক্ত কলেজে নির্ধারিত বিষয়ের উপরে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক ক্লাস নিতে হয়। ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক আরো কিছু কাজ থাকে। যেগুলো হল
১. শিক্ষার্থীদেরকে একাডেমী শিক্ষার পাশাপাশি মূল্যবোধ সম্পর্কে জানানো।
২. বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা
৩. কলেজে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করা
৪. খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজনে সহযোগিতা করা
৫. সরকার বা কর্তৃপক্ষর পক্ষ থেকে প্রদান করা অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা।
কিভাবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়া যায় (BCS Shikkha Cadre)
শিক্ষা ক্যাডারসহ অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারের যোগদানের জন্য অবশ্যই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার হতে হয়। যেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
১। প্রথম ধাপ হিসেবে অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হয়।
২। সঠিকভাবে যাদের আবেদন সম্পন্ন হয় তারা ২০০ নম্বরের একটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এই অংশে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, মানসিক দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে প্রিপারেশন নিতে হয়। প্রতিটি সার্কুলারের সাথে সিলেবাস প্রকাশ করা হয়।
৩। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য বিশেষ সার্কুলারের মাধ্যমে প্রকাশিত শিক্ষা ক্যাডারের নিয়োগে এই লিখিত পরীক্ষার অংশটি থাকে না। অর্থাৎ প্রিলিতে উত্তীর্ণরা সরাসরি ভাইবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
৪। যারা লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয় তাদের পরবর্তীতে ভাইভা পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়।
৫। ভাইয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের পরবর্তীতে মেডিকেল টেস্ট এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। এ সকল ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে যোগ্য এবং নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তবে সাধারণ সার্কুলারের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় সর্বমোট ১১০০ নম্বর থাকে। যার মধ্য ২০০ নম্বর থেকে শিক্ষাক্যাডারদের জন্য। অর্থাৎ কেউ যদি সব ধরনের ক্যাডারই চয়েস দিয়ে থাকে তাহলে তাকে ১১০০ নম্বরে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
সরকারি কলেজের প্রভাষক পদের সুযোগ সুবিধা
চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা না একাডেমির হতে ৪ মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। চাকরি চলাকালীন সময়ে এবং প্রমোশনের সময়ও এই প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আমরা জানি বাংলাদেশে অনেক সংখ্যক সরকারি কলেজ রয়েছে। যে কলেজগুলোতে প্রভাষক সহ বিভিন্ন পদে অনেক দক্ষ শিক্ষকরা কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে একজন শিক্ষক নবম গ্রেড অনুযায়ী বিভিন্ন ভাতা ঢাকা সহ সব মিলিয়ে বেতন পেয়ে থাকে। তবে বরাদ্দকৃত বাসা ভাড়া নির্ধারিত হয় এলাকা এবং গ্রেড অনুযায়ী। অর্থাৎ পরবর্তীতে যারা প্রমোশন পেয়ে উচ্চতর পদে যোগদান করবেন তাদের ভাতাও বাড়তে থাকে। সাধারণত জেলা সদরের মতো থাকলে ৩ হাজার টাকা অন্যান্য উপজেলায় ৫০০০ টাকা এবং পার্বত্য জেলায় অতিরিক্ত অর্থ হিসেবে মূল বেতনের ২০% ভাতা প্রদান করা হয়। সাধারণত ২ থেকে ৩ বছর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি করলে নবম গ্রেড থেকে অষ্টম গ্রেডে উন্নীত হওয়া যায়।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন শিক্ষকরা তাদের নির্ধারিত বেতন ছাড়াও কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়ে থাকে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারও তার ব্যতিক্রম নয়। এই বাড়তি ইনকামের মধ্যে রয়েছে টিউশন, বোর্ড পরীক্ষার খাতা দেখা, বিভিন্ন পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করা, বিভিন্ন সরকারি কাজের দায়িত্ব ইত্যাদি।
এমনকি চাকরি জীবনে শিক্ষা ক্যাডার থেকেও ভবিষ্যতে সচিব বলে যোগদান করারও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেকে মনে করে থাকেন অন্যান্য ক্যাডারের চাইতে এই ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা কম। কিছু কিছু দিক থেকে বৈষম্য রয়েছে। যেমন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা পুলিশ কর্মকর্তা যুদ্ধের পর থেকেই গাড়ি পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএস দিয়ে যোগদানের পরেও একজন শিক্ষক গাড়ি পান না।
শেষ কথা
আমাদের সমাজের সম্মানজনক পেশা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষকতা। তাইতো অন্যান্য পেশার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এই পেশাটিকেই বেছে নেন। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে একটি সরকারি কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগের মাধ্যমে আপনিও সমাজের একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।