বাজেট কি | বাজেটের প্রকারভেদ

- আপডেট সময় : ০৩:২৩:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
- / ১৬ বার পড়া হয়েছে
কমবেশি আমরা সবাই Budget শব্দটির সাথে পরিচিত। তবে বাজেট কি এবং এটি কি কি প্রকার হয়ে থাকে সেটি সম্পর্কে হয়তোবা খুব বেশি ধারণা আমাদের নেই। প্রতিবছরে বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এমনকি সেই সময়টাত আমরা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দেখে থাকি যে আগামী ১ বছরে কোন কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কোন কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের দাম কমতে থাকবে।
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে কোন পণ্যে বা সেবার মূল্য হ্রাস বৃদ্ধির উপর বাজেটের বেশ ভালো ভূমিকা রয়েছে। অর্থনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বাজেট।
বাজেট কি?
সরকারের বাজেট সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা থাকলেও শব্দটি সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা রয়েছে। যেমন আমরা প্রায়ই বলে থাকি যে এবারের ঈদের বাজেট ২০ হাজার টাকা। এর মানে হচ্ছে যে সেই ব্যক্তিটি ঈদ উপলক্ষে ২০ হাজার টাকা রেখেছে যেটা দিয়ে কিনা বিভিন্ন ধরনের বাজার অথবা কেনাকাটা করবে। এটি তার ব্যয়ের একটি হিসাব। তার ২০ হাজার টাকা আয়ের সুনির্দিষ্ট উৎস ও সম্ভাবনাও রয়েছে।
ঠিক তেমনি ভাবেই কোন একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে কত টাকা উপার্জন করতে পারে এবং বিভিন্ন খাতে কত টাকা ব্যয় করতে চায় তার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা হিসাব হচ্ছে বাজেট। দেশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন খাত যেমন চিকিৎসা সেবা, যোগাযোগ, শিক্ষা, সামরিক ইত্যাদি কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা হবে তার নীতিমালাই হচ্ছে বাজেট।
বাংলাদেশ সরকার একটি অর্থবছর হয়ে থাকর ১ জুলাই পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সামগ্রিক আর্থিক আর্থিক পরিকল্পনার একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিফলন থাকে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এই বাজেটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় বার্ষিক আর্থিক বিবরণী। আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন বাজেট কি। এটি সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি মূল চালিকাশক্তি।
এর মাধ্যমে দেশের জনগণ বুঝতে পারেন যে সরকার কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করছে। একইভাবে প্রতি বছরে সরকারের আয়ের পরিমাণও এই বাজেটে ফুটে ওঠে। যদি এর ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সরকার বাইরের দেশ হতে কিংবা ব্যাংক হতে লোন নিতে পারে। ব্যয় থেকে আয় বেশি হলে সেটাকে বলা হয় উদ্ধৃত বাজেট এবং ব্যয় এর চাইতে আয় কম হলে সেটাকে বলা হয় ঘাটতি বাজেট।
বাজেট কত প্রকার ও কি কি বা বাজেটের প্রকারভেদ
দেশের সরকারের আয় ব্যয়ের প্রকৃতি অনুযায়ী সাধারণত বাজেটকে ২ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. চলতি বাজেট
যে সকল বাজেটে কোন দেশের সরকারের চলতি আয় এবং চলতি ব্যয়ের হিসাব প্রদর্শন করা হয় তাই হচ্ছে চলতি বাজেট। এই ধরনের বাজেটের আয় হয় মূলত রাজস্ব থেকে। যার মধ্যে রয়েছে মূল্য সংযোজন কর, সম্পত্তি কর, ভূমি কর, আয় কর ইত্যাদি। এমনকি কর বহির্ভূত অনেক আয়ের উৎস রয়েছে। যেগুলি হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত লভ্যাংশ, মুনাফা, ঋণের সুদ ইত্যাদি।
২। মূলধনী বাজেট
মূলধনী বাজেটে সাধারণত সরকারের মূলধনী আয় ও ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়। এই বাজেটের অন্যতম উৎস হচ্ছে দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন করা। বিভিন্নখাত হতে সরকার যত টাকা আয় হয় তা দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়ন করা হয় এবং তাই একে উন্নয়ন বাজেটে বলা হয়। মূলধনী বাজেটের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন, হাসপাতাল তৈরি ইত্যাদি কার্যকলাপ বাস্তবায়ন করা হয়। মূলধনী বাজারের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে ব্যাংক ঋণ, অতিরিক্ত ট্যাক্স, বেসরকারি সঞ্চয়, বৈদেশিক অনুদান ইত্যাদি।
সুষম বাজেট কাকে বলে
বাজারের প্রকারভেদ বা বাজেট কত প্রকার ও কি কি সেটা জানার পর আমাদের সুষম বাজেট সম্পর্কে জানাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আগে একবার উল্লেখ করেছেন যে একটি দেশের সরকারের আয় ও ব্যয়ের নির্দিষ্ট পরিকল্পনাই হচ্ছে বাজেট। কিন্তু সব সময় যে আয় দিয়ে ব্যয়ের খাত গুলো পূরণ করা যাবে সেটি নাও হতে পারে। আয় তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে আবার প্রয়োজনের তুলনায় কমও হতে পারে।
তবে কোন নির্দিষ্ট সময় বা অর্থবছরে যদি সরকারের প্রত্যাশিত আয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ সমান হয় তাহলে তাকে অর্থনীতির ভাষায় সুষম বাজেট বলায়। এই ধরনের বাজেটে আয় এবং ব্যয়ের সম্ভাব্য পরিমাণ সমান থাকে বলে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকে এবং বিভিন্ন পণ্যের দ্রব্য বৃদ্ধির আশঙ্কা কম থাকে।
অসম বাজেট কাকে বলে
একইভাবে নির্দিষ্ট অর্থ বছরে সরকারের আয় এবং ব্যয়ের সম্ভাব্য পরিমান সমান না হলে তাকে অসম বাজেট বলে।
উদ্ধৃত বাজেট কাকে বলে
প্রত্যাশিত আয়ের তুলনায় ব্যয় কম হলে তাকে উদ্ধৃত বাজেট বলে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অর্থ বছরের সরকার যে টাকা আয় করে তার তুলনায় ব্যয় কম হয়। বাজেট কি সেটি জানার জন্য এই বিষয় জানার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘাটতি বাজেট কাকে বলে
যদি কোন আর্থিক বছরে সম্ভাব্য ব্যয়ের তুলনায় আয়ের পরিমাণ কম হয় তাহলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। যেহেতু বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয় তাই ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে সরকার কেন্দ্র ব্যাংক থেকে নিতে পারে বৈদেশিক ঋণ অনুদান গ্রহণ করতে পারে এবং জনসাধারণের কাছে থেকে নিতে পারেন।
বাজেট কিভাবে তৈরি করা হয়
বাংলাদেশের সংবিধানে বাজেট প্রণয়নের বিধান রয়েছে। প্রতিবছর এই কাজটি করে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ হতে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং উপক্রম সরবরাহ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে বাজেট পূরণের লক্ষ্যে মার্চ মাসে অন্যান্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের হতে মতামত নিয়ে এবং আলোচনা করে চলতে বছরের বাজেট কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর এই বাজেট জুন মাসে পেশ করা হয়।
জনগণের নিকট এটি পেশ করার জন্য দেশের অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা এ নিয়ে একটি বক্তব্য দেন। যে বক্তব্যকে আমরা বলে থাকি বাজেট বক্তৃতা। এ বক্তব্যে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির পরিস্থিতির একটি বর্ণনা দেওয়া হয়। এমনকি সারা বছরের সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেরও বিবরণী দেওয়া হয়। বক্তব্যের একটি অংশে ট্যাক্স বা কর নিয়েও আলোচনা করা হয়।
আশা করি বাজেট কি বাজেটের প্রকারভেদ বা বাজেট কত প্রকার ও কি কি ইত্যাদি প্রশ্নগুলো আপনারা ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। শিক্ষা সহ বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান মূলক আর্টিকেল করতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।