নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে পার্থক্য কি

- আপডেট সময় : ০৮:১১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
মানবজীবন পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজন শক্তি। যানবাহন, কলকারখানা সকল জায়গায়ই বিভিন্ন ধরনের এনার্জি প্রয়োজন হয়। প্রকৃতি হতে আমরা এই এনার্জি সাধারণত ২ টি উপায়ে পেয়ে থাকি। আর সেই দুই প্রকার অর্থাৎ নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে পার্থক্য কি সেটি আমরা জানব। তবে পার্থক্য সঠিকভাবে বোঝার আগে অবশ্যই সজ্ঞা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
নবায়নযোগ্য শক্তি কাকে বলে
নবায়ন শব্দ মানে নতুন করে তৈরি করা। অর্থাৎ পুরাতন একটি জিনিসকে নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করাই হচ্ছে নবায়ন। যে সকল শক্তিকে বারবার ব্যবহার করা যায় অথবা সেই শক্তির উৎস অফুরন্ত তাকে নবায়নযোগ্য শক্তি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ আমরা বায়ু প্রবাহ কিংবা সূর্যের আলোকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বলতে পারি। এর কারণ হচ্ছে সূর্য হতে আমাদের পৃথিবীতে তাপ বা বিকিরণ পদ্ধতিতে যে শক্তি আসে সেটি ব্যবহার না করলে শেষ হয়ে যাবে না।
এর কারণ হচ্ছে সূর্য যতদিন চলতে থাকবে ততদিন আমরা এই উৎস থেকে শক্তির সংগ্রহ করতে পারব। ঠিক একইভাবে বায়ু প্রবাহ একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উদাহরণ। কারণ পৃথিবী সৃষ্টির পর কোটি কোটি বছর ধরে এটি প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা যতই এই ধরনের শক্তি গুলোকে ব্যবহার করি না কেন প্রতিনিয়তই একইভাবে পেতে থাকবো।
নবায়নযোগ্য শক্তির মধ্য পার্থক্য জানার আগে সজ্ঞা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার। এতে করে পরীক্ষার হলে কিংবা ভাইবা বোর্ডে উত্তর দেওয়া অনেক সহজ হবে। তাই আমি চেষ্টা করছি বিস্তারিত উল্লেখ করার।
অনবায়নযোগ্য শক্তি কাকে বলে
যে সকল উৎস হতে প্রাপ্ত শক্তিগুলো পুনরায় নবায়ন করা যায় না কিংবা এর পরিমাণ সীমাবদ্ধতাকে অনবায়নযোগ্য শক্তি বলে। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস বা প্রাকৃতিক জ্ঞান। আমরা খুনি হতে যেয়ে তেল বা গ্যাস সংগ্রহ করে সেটি এক সময় ফুরিয়ে যায় বা শেষ হয়ে যায়। আর এই কারণেই এটিকে অনবায়নযোগ্য শক্তি বলে। পৃথিবীতে গ্যাস এবং তেল ছাড়াও আরো অনেক ধরনের অনবায়নযোগ্য শক্তি পাওয়া যায়।
নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে পার্থক্য কি
নবায়নযোগ্য | অনবায়নযোগ্য |
১। নবায়নযোগ্য শক্তি বারবার ব্যবহার করা যায়। | অপরদিকে অনবায়নযোগ্য শক্তি বারবার ব্যবহার করা যায় না। |
২। নবায়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ অফুরন্ত। | কিন্তু অনবায়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ সীমিত। |
৩। নবায়নযোগ্য শক্তিকে আমরা অক্ষয় বলতে পারি অর্থাৎ এটি কখনো ক্ষয় হয় না। | ব্যবহারের ফলে অনবায়নযোগ্য শক্তি আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে পারে। |
৪। নবায়নযোগ্য শক্তি পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমরা যতই সূর্যের আলো বাতাস এই ধরনের শক্তি গুলো ব্যবহার করে না কেন প্রকৃতিতে তা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে না। | অপরদিকে অনবায়নযোগ্য শক্তিগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকেন। যেমন প্রাকৃতিক তেল ব্যবহারের ফলে কালো ধোয়া উৎপন্ন হয়। |
৫। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের কোন শেষ নেই। মানুষ যতই ব্যবহার করুক না কেন এটি সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। | অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎস গুলি সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ একটি গ্যাসের খনি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উত্তোলনের পরে সেই খনিতে আর কোন গ্যাস পাওয়া যায় না। |
৬। প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করার জন্য বেশি খরচ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারে এই ধরনের শক্তি সবচাইতে বেশি সস্তা। | অপরদিকে অনবায়নযোগ্য শক্তি দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। |
৭। যেকোনো ধরনের নবায়নযোগ্য শক্তি স্থানীয়ভাবে খুব সহজে ব্যবহার করা যায় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াও সহজ। | অনবায়নযোগ্য শক্তি অনেক ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যেমন বাংলাদেশে কোন তেলের খনি নেই। তাই অন্যদের সাথে তেল আমদানি করা হয়। |
৮। নবায়নযোগ্য শক্তি তুলনামূলকভাবে সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন। | অনবয়নযোগ্য শক্তি সংরক্ষণ করা অনেক সহজ। |
মানব জীবন পরিচালিত করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নানা ধরনের শক্তির ব্যবহার করতে হয়। তবে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে পার্থক্য জানা আমাদের প্রত্যেকের জন্য জরুরী। কারণ হচ্ছে এই শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। অনবায়নযোগ্য শক্তি যেমন গ্যাস তেল ইত্যাদি ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে আমরা যত বেশি সূর্যের আলো, নদীর স্রোত, বায়ু প্রবাহ ইত্যাদি ব্যবহার করব আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ ততই ভালো থাকবে। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি কল কারখানার কালো ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ধরনের শক্তির ব্যবহারের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পৃথিবীজুড়ে যার কারণে বেড়ে চলছে তাপমাত্রা। যার ফলাফল ইতিমধ্যে আমরা ভোগ করছি। অতিরিক্ত বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, তাপ প্রবাহ ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি এই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ। তাই আমাদের বেশি বেশি নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে পার্থক্য বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রায়ই এসে থাকে। আশা করি এখন তোমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুব ভালোভাবে লিখতে পারবে।