বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ

- আপডেট সময় : ০৮:৪৩:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ সম্পর্কে জানা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকের পক্ষে ছেলেদের মত বাইরে গিয়ে চাকরি বা বিজনেস করা সম্ভব হয় না। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ফুল টাইম জব সহ না ধরনের বিজনেস এখন ঘরে বসেই করা সম্ভব। তবে কোন পেশাটি আপনার জন্য ভালো হবে সেটি বোঝার জন্য কিছুটা রিসার্চতো প্রয়োজনই।
তাই আজকে আমি এমন কিছু আইডিয়া নিয়ে শেয়ার করব যেগুলো ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও বাড়িতে বসে করতে পারে। তাই পুরো লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আপনার ক্যারিয়ার গড়ুন।
বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ
বাংলাদেশের সকল এলাকায় এখন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। আর ইন্টারনেটের কল্যাণেই আমরা ঘরে বসে সারা পৃথিবীর কোথায় কি হচ্ছে তার সম্পর্কে মুহূর্তেই জানতে পারি। আগে অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রম যেখানে কাগজে-কলমে হতো এখন সেগুলো পুরোপুরি কম্পিউটার এবং মোবাইল বা প্রযুক্তি নির্ভর। এমনকি পাল্টে গেছে সকল অফিশিয়াল কার্যক্রমের ধরণও। তাইতো অফিসে চাকরি করার বদলে বাসায় বসে কম্পিউটার কিংবা মোবাইল দিয়েই অফিসের অনেক কাজ সম্পন্ন করা যায়।
করোনাকালীন সময়ে আমরা দেখেছি কিভাবে লেখাপড়ার সহ প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কাজ বাসায় বসে করা যায়। তো নিচে আমি এমন কিছু আইডিয়া শেয়ার করছি যেসবের মাধ্যমে একজন মেয়ে বাড়িতে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং করা – বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় পেশা
ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি খুব ছোট হলেও এর পরিধি অনেক বিস্তর। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে মুক্ত পেশাজীবী। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা স্বাধীন কাজ করা যায়। তবে বাস্তবে দেখা যায় এ ধরনের কাজও অনেক পরিশ্রমের এবং ধৈর্যের। সময়মত কাজ ডেলিভারি দেওয়া, কাজের কোয়ালিটি মেইনটেইন করা, তার সাথে প্রয়োজন বাড়তি দক্ষতার।
কারণ নিজের রুমে বসে দূরের কোন ক্লায়েন্টের একটি কাজ যখন আপনি করে দেবেন তখন সেই কাজ সম্পর্কে অবশ্যই পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কোন একজন ক্লায়েন্ট একটি ডিজাইনের কাজ দিয়েছে। সেটি হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, টি শার্ট ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন ইত্যাদি। এখন আপনি যদি না জানেন ডিজাইন কিভাবে করতে হয় তাহলে সেটা কোনভাবেই করা সম্ভব নয়।
তাইতো বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ জেনে তা সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করাই হচ্ছে সবচাইতে বেশি জরুরী। বর্তমান যুগে মেয়েদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ইত্যাদি সেক্টর গুলো বেশ জনপ্রিয়। বোঝার সুবিধার জন্য আমি নিচে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি আলোচনা করলাম।
১। গ্রাফিক্স ডিজাইন
এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে লোগো, টি শার্ট, ব্যানার, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ওয়েবসাইট, অ্যাপের ডিজাইন ইত্যাদি।
২। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
ক্লায়েন্টের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদাভাবে লোক নিয়োগ করা হয়। যাদের ফেসবুক ইউটিউব বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম চালনা আর দক্ষতা রয়েছে তারা অনলাইনে জব খুজতে পারেন। এমনকি বিভিন্ন জব পোর্টালে এমন সার্কুলার অনেক প্রকাশিত হয়।
৩। প্রোগ্রামিং
প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমেই সকল ধরনের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ তৈরি করা হয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে যত ক্যাটাগরি রয়েছে তার মধ্যে এটি সবচাইতে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয় আমার কাছে। তবে যারা গণিতে ভালো দক্ষ তাদের জন্য ভালো ক্যারিয়ার হতে পারে এটি।
৪। কন্টেন্ট রাইটিং
একটি ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করে কিংবা অন্য কারো ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লিখেও টাকা উপার্জন করা যায়। মেয়েদের বাড়িতে বসে কাজ করার জন্য এটি তুলনামূলকভাবে সহজ।
৫। ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটিং
youtube, facebook, instagram ইত্যাদির মাধ্যমে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেও মনিটাইজেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। এর জন্য নির্দিষ্ট একটি নিশ বাকি ক্যাটাগরি চুস করে ভিডিও তৈরি করতে হবে।
ঘরে বসে মেয়েদের কাজ – অনলাইনে পণ্য বিক্রি
উপরে উল্লেখিত ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য অবশ্যই যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। বাইরের দেশের ক্লায়েন্টের কাজ পাওয়ার জন্য দরকার ইংরেজিতে দক্ষতা।
তাইতো আরো একটি অল্টারনেটিভ কাজ হচ্ছে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করা। ফেসবুক ইউটিউবে ঢুকলেই এখন বিভিন্ন পেজের বিজ্ঞাপন আসে। যেখানে দেখা যায় হাজার হাজার তরুন তরুণীরা ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই কাপড়, কসমেটিক্স, খেলনা ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করছে। যে ধরনের প্রোডাক্টস আপনার হাতের নাগালে পাওয়া যায় কিংবা বিক্রি করতে পছন্দ করবেন এমন কিছু আইটেম পছন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে আপনি বিক্রি করতে পারবেন।
বাংলাদেশে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা কিনা এই প্ল্যাটফর্ম হতে মাসে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে। কুরিয়ার সুবিধা বৃদ্ধি ও অনলাইনে পেমেন্টের জন্যই এই সেক্টরে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মহিলাদের ঘরে বসে ইনকাম করার উপায় – হোমমেড খাবার
শুধুমাত্র পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে যে বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ করতে পারে তা নয়। বরং বিভিন্ন ধরনের হোমমেড ফুড যেমন কেক, আচার বা টিফিন সার্ভিস দিয়েও মাসে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।
ধরুন আপনি এমন একটি এলাকায় বাস করেন যেখানে অনেক লোকের বসবাস। আশেপাশে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মার্কেট, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি রয়েছে। এখন বাসায় বসে এই সকল প্রতিষ্ঠানের লোকেদের টিফিন সার্ভিস, জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কেক, ছোট ছোট ইভেন্ট গুলোতে বিভিন্ন খাবারে আইটেম সেল করেও অর্থ আয় করা যায়।
তবে এই কাজগুলো করার জন্য দরকার প্রপার মার্কেটিং। আপনি যে এলাকায় এই ধরনের ফুড সেল করছেন তা সবাইকে জানানোর জন্য ফেসবুক, ইউটিউব সহ বিভিন্নভাবে মার্কেটিং করতে হবে। আর যেহেতু ফুড আইটেম গুলি খুব দ্রুত অপচনশীল তাই দরকান টাইম ম্যানেজমেন্ট। এমনকি দ্রুত ডেলিভারি দেওয়ার জন্য প্রয়োজন আলাদা ডেলিভারি ম্যান। খাবারের মান ভালো থাকলে বাকি বিষয় যদি মেইনটেইন করা সম্ভব হয় তাহলে আজই চালু করে দিতে পারেন আপনার হোমমেড ফুড সার্ভিস।
বিউটি পার্লারের মাধ্যমে মেয়েদের আয় করার উপায়
যেকোনো ইভেন্টেই আজ যেন পার্লারের সাজা একটি অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর এলাকায় আমি অনেক দেখেছি বাসা বাড়ির নিচে অথবা একটি রুমে বিউটি পার্লার দিয়ে মেয়েরা অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এই কাজটি করার জন্য অবশ্যই যোগাযোগ প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেই সাথে লাইসেন্স ও ডেকোরেশনের দরকার। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে মেকআপ সরঞ্জাম, টেবিল আয়না, হেয়ার স্পা মেশিন, হেয়ার রিকভারি মেশিন, হিটার চেয়ার, ওয়াটার স্প্রে, লাইটিং ইত্যাদি।
দর্জির কাজ – বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ
টাকা ইনকামের জন্য কোন কাজে ছোট নয়। আজকের ছোট উদ্যোগ ভবিষ্যতে হয়তোবা আপনাকে অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক করে তুলবে। তাইতো একটি সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জির কাজ শুরু করতে পারেন। মেয়েদের জামা কাপড় সাধারণত তারা আশেপাশের ঘরোয়া দর্জি দিয়েই সেলাই করে নিয়ে থাকে।
ইন্টারনেটের যুগে অনলাইনে বসেই এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়। আর সরঞ্জাম কিনতেও খুব বেশি টাকা খরচ হয় না। পায়ে চালানো একটি সেলাই মেশিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। আর ২-৩ হাজার টাকার মধ্যে বাকি সকল সরঞ্জাম কিনতে পারবেন।
কৃষিভিত্তিক কাজ – মেয়েদের ঘরে বসে টাকা ইনকাম
আপনি যেখানে বসবাস করেন সেখানে যদি গ্রামীণ পরিবেশ থাকে অথবা বাড়তি জায়গায় থাকে তাহলে সেখানে একটি কৃষিকাজ শুরু করে দিতে পারেন। এ সকল কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে হাঁস মুরগি পালন, ফলমূল, শাকসবজি রোপণ ইত্যাদি। সঠিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে যদি আজই এই কাজটি শুরু করতে পারেন তাহলে আপনি হয়ে যেতে পারেন কৃষি উদ্যোক্তা।
তবে এর জন্যও প্রয়োজন যথা দেন। অনলাইনেও এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতে পারা যায়। এমনকি ইনভেস্টের পরিমাণও কম এবং বেশ পরিশ্রম রয়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মহিলারাও এ ধরনের কাজ করে টাকা ইনকাম করছে।
বাড়িতে বসে মেয়েদের কাজ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই অর্থ উপার্জনে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ চাকুরির বাজারে এত বেশি পরিমাণে প্রতিযোগিতা যে অনেকেই লেখাপড়া শেষ করে হতাশ হয়ে পড়ে। আর এই ধরনের উদ্যোগগুলি হতাশা থেকে দূরে রাখবে এবং ভবিষ্যতে নিশ্চিত একটি উপার্জনের উৎস হয়ে উঠবে।
প্রতিদিনের সোনার ভরির দাম জানতে এখানে প্রবেশ করুন