কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করলে ভালো হবে

- আপডেট সময় : ০২:১০:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে
এসএসসি ও এইচএসসির পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা। আর এই সময়টাতেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী একটি বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। আর সেটি হচ্ছে কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করলে ভালো হবে সেটি নির্ধারণ করা। তাছাড়া উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর ভর্তির যুদ্ধে লড়াই করে যখন কাঙ্খিত বিষয়টি না পাওয়া যায় তখন হতাশা যেন আরো ঘিরে ধরে। এ সময়টাতে ভুল পথে পা না বাড়িয়ে যাতে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারো তার জন্য আজকের আর্টিকেলটি তোমাদের জন্য সহায়ক হবে।
একটি ভালো বা পছন্দের সাবজেক্টে লেখাপড়া করে ভবিষ্যতে ভালো চাকরি এবং নিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। তোমার কোনভাবেই ইঞ্জিনিয়ারিং ভালো লাগেনা, ম্যাথ কঠিন মনে হয় কিন্তু তুমি এই রিলেটেড কোন সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছো। এতে করে সাবজেক্টের যতই সুবিধা থাকুক না কেন বা চাকুরীর বাজারে যতই চাহিদা থাকুক না কেন সেটিতে কখনোই মন চায় দেবে না। এরকম অনেকেই আছে যারা কিনা নিজের সাবজেক্টে ক্যারিয়ার না গড়ে মাস্টার্স শেষ করার পর অন্য কোন ফিল্ডে ক্যারিয়ার গড়ছর।
যদিও যে বিষয়ে পড়ালেখা করেছে সেই বিষয় ক্যারিয়ার করতে হবে এমনটি নয় তবুও পছন্দের সাবজেক্টে তাই লেখাপড়া করা উচিত।
অনার্স সাবজেক্ট চয়েস কি
বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য এডমিশন এক্সাম হচ্ছে। এই এক্সাম বা আবেদনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনার্স সাবজেক্ট চয়েস। এর মানে হচ্ছে তুমি ঠিক কোন ইউনিটে বা কোন বিষয় সমূহে ভর্তি হতে আগ্রহী তার একটি পছন্দের তালিকা দেওয়া।
ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, মানবিক, কমার্স বা সাইন্সের আলাদা আলাদা ভর্তি প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাইতো আবেদনের সময় এই অনার্স সাবজেক্ট চয়েস দিয়ে দিতে হয়। যাতে করে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে তুমি ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারো। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। যার মধ্যে ক ইউনিট হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগের, খ ইউনিট কমার্স বিভাগের এভাবে অন্যান্য ইউনিটগুলো এক একটি বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকে।
যখন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে পারবে বা মেধাতালিকায় আসতে পারবে তখন নম্বরের উপর ভিত্তি করে অনার্স সাবজেক্ট তালিকা থেকে একটি সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে কাঙ্খিত সাবজেক্ট পাওয়ার জন্য অবশ্যই ভালো নম্বর পেতে হবে।
কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করলে ভালো হবে
অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায় সাইন্স কিংবা কমার্স নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার সত্তেও তারা ডি-ইউনিট অর্থাৎ মানবিক বিভাগের সাবজেক্ট গুলোতে পরীক্ষা দেয়। ডি ইউনিটের সাবজেক্টের মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি, বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি। অর্থাৎ আর্টসের সাবজেক্ট। এর কারণ হচ্ছে অনেকেই মনে করে তার আর বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়া উচিত নয় বরং মানবিক বিভাগে গ্র্যাজুয়েট হওয়া উচিত।
আবার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল কিংবা সাইন্সের সাবজেক্টের ভর্তি পরীক্ষা দেয়। এ ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল। কমার্সের স্টুডেন্টদের প্রধান টার্গেট থাকে বিবিএতে ভর্তি হওয়ার। বিবিএ রিলেটেড সাবজেক্ট হচ্ছে একাউন্টিং, ফিন্যান্স ইত্যাদি। নিচে আমি এমন কিছু সাবজেক্টের কথা আলোচনা করব যা পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ভালো সাবজেক্ট।
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
শুরুতেই আসে বিজ্ঞান বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে। ভবিষ্যৎ তথ্য প্রযুক্তির আরো উন্নতির যুগে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল, অ্যারোনটিক্যাল, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এই সাবজেক্টগুলো বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচাইতে উপযোগী। তবে পড়ালেখা বেশ কঠিন।
মেডিকেল ডিপার্টমেন্ট
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচাইতে পছন্দের বিভাগ এটি। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কলেজে এমবিবিএস, ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়ার জন্য অসংখ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই সাবজেক্ট থেকে লেখাপড়া শেষ করে সরাসরি মানবিক কাজ এবং জনগণের সেবা করার সুযোগ থাকে। সেই সাথে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়ন করা যায়।
বিজ্ঞান বিভাগের অন্যান্য সাবজেক্ট
যদি কারো ডাক্তারি কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ভালো না লাগে তাহলে কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করলে ভালো হবে সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই চিন্তায় আছো। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, বোটানি, বায়োটেকনোলজি, ফার্মেসি, লেদার টেকনোলজি, সাইকোলজি, গণিত ইত্যাদি বিজ্ঞান বিভাগের সবচেয়ে ভালো সাবজেক্ট। এ সকল বিষয় ছাড়াও আরো অনেক সাবজেক্ট রয়েছে যেগুলোতে তোমার পছন্দ অনুযায়ী ভর্তি হতে পারো। তবে সার্বিক চাহিদার ভিত্তিতে উপরের বিষয়গুলি ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে।
কমার্স বা ব্যবসায়িক শিক্ষা শাখার সাবজেক্ট
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা এবং মার্কেটিং। এ সকল পিওর সাবজেক্টে অনার্স করার পাশাপাশি প্রাইভেট পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। তবে বর্তমান বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বিবিএর বেশ ডিমান্ড রয়েছে। যদিও মার্কেটিং কিংবা ফিন্যান্স থেকে অনার্স শেষ করলে সেটি বিবিএ ভারসাম্যমান মর্যাদার ডিগ্রী হয়ে থাকে।
মানবিক বিভাগ থেকে কোন সাবজেক্টে অনার্স করলে সবচেয়ে ভালো হবে
আর্টস বা মানবিক বিভাগে বেশ কয়েকটি ভালো ভালো বিষয় রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থনীতি, আইন বিভাগ, বাংলা, ইংরেজি, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি।
এসকল সাবজেক্টের বাইরেও ইসলামিক স্টাডিজ, গ্রন্থাগার, ব্যবস্থাপনা, সংগীত, নৃত্যকলা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ক্রিমিনালজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স, চলচ্চিত্র এন্ড ফটোগ্রাফি ইত্যাদি সাবজেক্টে পড়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। যারা কিনা সাংবাদিক হতে চায় কিংবা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হয়ে যায় অত্যাচার তাদের জন্য অনেকগুলো সাবজেক্ট রয়েছে মানবিক বিভাগে।
এমনকি বিভিন্ন ভাষাবিজ্ঞান, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি, উইম্যান এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ, ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য ইত্যাদি চমকপ্রদ সাবজেক্টগুলো পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন একজন আসছে শিক্ষার্থী। যারা জানতে চান অনার্সে কোন সাবজেক্ট সহজ তারা তাদের পছন্দের তালিকায় এই বিষয়গুলো রাখতে পারেন।
এমনকি বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর এই সকল সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। আশা করি তোমরা এখন ধারণাপাত্র যে কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করলে ভালো হবে।
বিসিএসের জন্য কোন সাবজেক্ট ভালো
বিসিএস বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস জয়েন করার জন্য সকল সাবজেক্টে ভালো। তবে এটা নির্ভর করে যে আপনি কোন ক্যাডারে জয়েন করতে চান। প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন পথ যেমন পুলিশ ক্যাডার, ম্যাজিস্ট্রেট, কমিশনার ইত্যাদি পদে যোগদান করার জন্য আপনি যে কোন বিষয় হতে যোগদান করতে পারবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু পথ রয়েছে যেমন টেকনিক্যাল অর্থাৎ প্রভাষক পদ, স্বাস্থ্য ক্যাডার ও অন্যান্য কয়েকটি ডিপার্টমেন্টে যোগদান করার জন্য নির্দিষ্ট সাবজেক্টে অনার্স এবং মাস্টার্স থেকে প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন না করেন তাহলে কখনোই স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগদান করতে পারবেন না। আবার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বাংলা বিষয়ে প্রভাষক পদেও আবেদন করতে পারবেন না।
অনার্সে কোন সাবজেক্ট সহজ বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সাবজেক্ট ভালো
সত্যি বলতে কোন কিছুর সহজ নয় আবার কোন বিষয়েই কঠিন নয়। সম্পূর্ণ নির্ভর করে একজন মানুষের ডেডিকেশন এবং পড়াশোনার উপর। যদি কেউ পড়াশোনা দিয়ে রাখে কিংবা সিলেবাস শেষ করাতে আলসেমি প্রকাশ করে তাহলে যেকোনো বিষয়ে পরীক্ষার আগে তার কাছে কঠিন মনে হবে। কিন্তু সময়ের পড়ার সময় শেষ করলে সকল সাবজেক্টে সহজ মনে হয়।
তবে এমন কিছু সাবজেক্ট রয়েছে যেগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম পরিশ্রম করতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামিক হিস্টরি, দর্শন ইত্যাদি। যারা কিনা গণিত ভয় পান তারা এই সাবজেক্টগুলো অনার্সে চয়েস যেতে পারেন। এতে করে খুব সহজেই ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হবে।
আমাদের শেষ কথা
ভবিষ্যতে শুধুমাত্র ভালো ক্যারিয়ারই করার নয় বরং জ্ঞান অর্জনের জন্য লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই। উচ্চতর ডিগ্রীর যে কোন বিষয়েই আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান এবং শিক্ষা দিতে পারে। তার জন্য শুধুমাত্র অনার্সে কোন সাবজেক্ট ভালো কিংবা কোনটির চাহিদা রয়েছে সেটার দিকে না তাকিয়ে নিজের কাছে কোনটি ভাল লাগে তার ওপরে ফোকাস করা উচিত। এতে করে একদিকে যেমন লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহও বাড়বে ঠিক তেমনিভাবে ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে। সবার জন্য শুভকামনা।