ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার পার্থক্য | Induction or infrared Cooker Price

- আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / ৩২ বার পড়া হয়েছে
বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের ফলে আমরা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন গ্যাজেট ব্যবহার করছি। রান্নাঘরও এই আধুনিকায়ন থেকে দূরে নেই। তাইতো আজকে আমি হাজির হয়েছে ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার পার্থক্য, দাম, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে। অনেক এলাকায় গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে ঝামেলা বিহীন খাবার রান্নার জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত চুলা। আপনার পরিবারের জন্য কোন ধরনের ইলেকট্রিক কুকার ভালো হবে তা জেনে নিতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
আবাসিক এলাকা গুলোতে নতুন করে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে। যারা কিনা বিল্ডিং, পাকা ঘর কিংবা ফ্ল্যাটে থাকেন কিন্তু গ্যাসের সংযোগ নেই তাদের জন্য বারবার সিলিন্ডার গ্যাস বহন করা বেশ ঝামেলার হয়ে থাকে। কিন্তু যদি বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে তাহলে তারা বাজার থেকে ইনডাকশন কুকার বা ইনফ্রারেড কুকার কিনে নিয়ে রান্নাঘরের সকল রান্নাবান্না করতে পারেন। কিন্তু এই দুই ধরনের চুলায় কিনতে গিয়ে অনেকেই নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। কোন ধরনের চুলায় বিদ্যুৎ বিল কম, কি কি সুবিধা অসুবিধা ইত্যাদি বিষয় জানতে চান? চলুন ধাপে ধাপে সেগুলো জেনে নেই।
ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার পার্থক্য
উভয়চুলারই গঠন, ম্যাটেরিয়াল মোটামুটি একই ধরনের। বাংলাদেশের বাজারে যে ধরনের ইলেকট্রিক কুকার গুলি পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই হচ্ছে কাঁচের তৈরি। তাইতো দেখতে সুন্দর এবং রান্নাঘরে অনেক সুন্দর মানানসই হয়। এমনকি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন আইটেম রান্না করার জন্য রয়েছে নানা ধরনের ফাংশন। তবে পরিবারের সদস্য, রান্নার ধরন ইত্যাদি অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য উপযোগী হবে সেটি জানতে নিচের পার্থক্যগুলি পড়ুন।
ইনডাকশন কুকার
বাজারে বহুল প্রচলিত এই কুকারটিতে সকল ধরনের পাত্র ব্যবহার করা যায় না। শুধুমাত্র যেই সকল পাত্র চুম্ব আকর্ষিত হয় যেমন অ্যালুমিনিয়াম, স্টীল ইত্যাদি কিনে শুধুমাত্র ব্যবহার করা যায। সাধারণ রান্না করার হাঁড়ি, কড়াই যে কোন কিছু দিয়েই ইনডাকশন কুকারে রান্না করা যাবে না। এর কারণ হচ্ছে ইনডাকশন কুকার সাধারণত ম্যাগনেটিক সেন্সরকে কাজে লাগিয়ে তাপমাত্রা সরবরাহ করে।
এই চলার আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে চুলাটির যেই অংশে রান্নার পাত্র বসানো হয় শুধুমাত্র সেই অংশ ব্যতীত আর কোন অংশ গরম হয় না। অর্থাৎ সেখানে যদি কোন কারণে হাতের ছোঁয়া লাগে তাহলে পুড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যাদের বাসায় শিশু কিংবা বাচ্চারা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইনডাকশন কুকার ব্যবহার করা উচিত।
ইনফ্রারেড কুকার Infrared Cooker
এই ধরনের চুলায় যেকোনো ধরনের পাত্র ব্যবহার করা যায়। এটি অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল কিংবা রান্নার যেকোনো পাত্র হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে এই চুলাটির মাঝখানের অংশ উত্তপ্ত হয় এবং রান্নার কাজে সাহায্য করে। তবে চুলার উত্তপ্ত অংশের আশেপাশে যদি হাত লাগে তাহলে সেটি পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই তার মাঝখানের অংশের আশেপাশের ছড়িয়ে পড়ে এবং উপরের দিকেও পরিবাহিত হয়। তাই হাত বা কাপড়ের প্রান্ত পড়লে সেটি পুড়ে যাবে।
উপরের ইনডাকশন এবং ইনফ্রারেড চুলার পার্থক্য নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনি সকল ধরনের পাত্র ব্যবহার করতে চান এবং উত্তপ্ত কুকার চান তাহলে আপনার জন্য ইনফ্রারেড কুকার ভালো হবে। আর যদি নির্দিষ্ট কিছু পাত্র ব্যবহার করতে চান এবং কোন ধরনের ঝুঁকিচান না তাহলে অবশ্যই ইনডাকশন কুকার ভালো হবে।
ইনফ্রারেড ও ইনডাকশন কুকারের দাম কত টাকা Induction Cooker Price
বাংলাদেশের মার্কেটে ওয়ালটন, যমুনা, মিয়াকো, ভিশন ইত্যাদি কোম্পানির ইনফ্রারেড ও ইনডাকশন কুকার কিনতে পাওয়া যায়। এই ধরনের কুকারের দাম সাধারণত শুরু হয় ৩ হাজার টাকা থেকে। ৪ থেকে ৭ হাজার ইত্যাদি দামের চুলাও পাওয়া যায়।
ইনফ্রারেড ও ইনডাকশন চুলার বিদ্যুৎ বিল কেমন আসে
বাজারের প্রচলিত এই ইলেকট্রিক চুলা গুলোর সাধারণত ২২০০ ওয়াটের হয়ে থাকে। আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে থাকি যে অমুকটির বিদ্যুৎ বিল কম এবং অমুকটির বিদ্যুৎ বিল বেশি। কিন্তু বাস্তবের পক্ষে এটি নির্ভর করে ওয়াটের উপর। সাধারণত ২২০০ ওয়াটের এই ইলেকট্রিক কুকার গুলোতে নিয়মিত রান্না করলে প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিল আসতে পারে। আর এই বিল সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি দৈনিক কতক্ষণ সময় ধরে এটি রান্না করছেন। ইনডাকশন চুলার বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলকভাবে অন্যান্য রান্নার মাধ্যম হতে অধিক সাশ্রয়ী।
ইনফ্রারেড ও ইনডাকশন চুলার সুবিধা কি কি
• বিদ্যুৎ চালিত চুলার সবচাইতে সুবিধা জনক দিক হচ্ছে এটি সাশ্রয়ী। যেখানে প্রতিমাসে একটি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম মোটামুটি ১৫০০ টাকা পড়ে সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিয়ে কয়েকজন সদস্যের একটি পরিবারের রান্নার কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। সাধারণ গ্যাসের চুলা কেনার ক্ষেত্রেও ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দাম পরে। সেখানে ৪০০০ টাকার মধ্যে একটি ইলেকট্রিক কুকার পাওয়া যায়।
• ইলেকট্রিক কুকারের দামই শুধুমাত্র কম নয় বরং এটি সহজে গ্রহণযোগ্য। কয়েকদিনের জন্য কোথাও পিকনিকে গেলে, শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গেলে সাথে করে নিয়ে যাওয়া যায়।
• ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার পার্থক্য থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই ধরনের সুবিধা রয়েছে। যার মধ্য রয়েছে চাইলেই এই উভয় ধরনের কুকার দিয়েই বারবিকিউ স্ট্যান্ড দিয়ে পছন্দ মত চিকেন রান্না করা যায়। এমনকি রুটি সেঁকার জন্যও আলাদা স্ট্যান্ড পাওয়া যায়। যেগুলো দিয়ে খুবই কম সময়ে রুটি রান্না করা সম্ভব। এটি ইনফ্রারেড ও ইনডাকশন চুলার সুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার অসুবিধা
সকল ধরনের পণ্যের কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। যেমনটা ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। চুলার মাঝখানের গোলাকার অংশ অনেক বেশি গরম হয়ে যায় বলে ভুলবশত দুর্ঘটনা করতে পারে।
এমনকি সাধারণ চুলার মত উঁচু অংশ নেই বলে যে কোন সময় পাত্র কাজ হয়ে যেতে পারে কিংবা নাড়াচাড়া করতে সমস্যা হতে পারে।
যেহেতু এই ইলেকট্রিক কুকারগুলোর পুরোটাই গ্লাস দিয়ে তৈরি তাই আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এটি খুবই মোটা এবং টেকসই গ্লাস তবুও কোন কিছু স্থান থেকে পড়ে গেলে ভেঙে যেতে পারে। এমনকি গরম কাঁচের উপর ঠান্ডা পানি পড়লেও সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাইতো এর স্থায়িত্ব এবং অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আমাদের শেষ কথা
সুবিধা অসুবিধা নিয়েই সকল ধরনের পণ্য আমরা ব্যবহার করে থাকি। আপনারা ইতিমধ্য জন্য গিয়েছেন ইনডাকশন ও ইনফ্রারেড চুলার পার্থক্য কোনটিতে বিদ্যুৎ বিল কম আসে ইত্যাদি বিষয় করে। তবে বাজার হতে কেনার আগে অবশ্যই এর দাম গুলি ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। সাধারণত এই চুলা গুলোর সাথে এক বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়ে থাকে। তাই কেনার আগে সেটিও যাচাই করে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।