বাংলাদেশ ০২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আশুরা কি | এর তাৎপর্য ও আশুরার ইতিহাস

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

আশুরা কত তারিখে

মুসলমানদের ধর্মীয় দিন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন আশুরা কি এবং এর ইতিহাস তাৎপর্য নিয়ে আজকে আলোচনা করব। এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে দশ মহরম। ইসলামিক পরিভাষায় যেটা দ্বারা বোঝায় মহরম মাসের ১০ তারিখ। আশুরার তাৎপর্য হিজরি সনের মহরম মাসকে আরো অনেক বেশি স্মরণীয় করেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা এই দিনটাকে আরো অনেক বেশি মহিমান্বিত করেছে।

আশুরা কি ও আশুরার ইতিহাস

মহরম মাসের ১০ তারিখের এই দিনটি সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই এর ইতিহাস সম্পর্কে আগে জানতে হবে। এই আশুরার ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিরাউনের অত্যাচার থেকে হযরত মুসা (আ.) নিষ্কৃতি লাভ করা। আশুরার এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিরাউনকে তার সৈন্য বাহিনীর সহ লোহিত সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর উষালগ্ন থেকেই আশুরার দিনগুলিতে ঘটে গেছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা। চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেই তাহলেই আপনারা বুঝতে পারবেন আশুরা কি এবং কেন এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকেই হয়তো বা মনে করেন ফেরাউন তার সৈন্যদলসহ নীল নদে ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই ধারণা টি ভূল। বরং তাকে বিশাল সৈন্যে বহন সহ ডুবিয়ে দিয়ে সারা পৃথিবীবাসীকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে একটি হাদিসও রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদিনা যান তখন তিনি সেখানকার ইহুদি সম্প্রদায়েরকে আশুরার রোজা পালন করতে দেখেন। প্রিয় নবী (সা.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে তোমরা কেন রোজা পালন করছো। উত্তরে ইহুদীরা বলে যে এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.) এবং বনী ইসরাইলকে রক্ষা করেছিলেন ফেরাউনের অত্যাচার থেকে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মূসা আলাইহিস সাল্লাম আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। এই কথা শুনে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) এরশাদ করেন যে হযরত মূসা (আ.) এর এই কৃতজ্ঞতা অনুসরণে তাদের চাইতে আমরা বেশি হকদার। তাই তিনি মহরমের দশ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং আমাদেরকেও তা পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)

আশুরা কি এই পর্বে আমরা শুধুমাত্র একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে। পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আপনারা সামনে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। উপরোক্ত হাদিসের আলোকে এটি আমরা বুঝতে পারি যে হযরত মূসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচার থেকে আশুরার দিনে রেহাই পেয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি হাদিস গ্রন্থেই এটি সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু অনেকের মধ্যে এই ভ্রান্ত ধারণা আছে যে পবিত্র আশুরার দিনকে তারা শুধুমাত্র কারবালার ইতিহাস কি বুঝে থাকে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে মহরমের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। অর্থাৎ কারবালার ইতিহাসের মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনার আগে থেকেই ঐতিহ্যবাহী ভাবে স্বীকৃত।

এর কারণ হচ্ছে কারবালার যু – দ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরীর ১০ মহরমে। আশুরা রোজার প্রচলন শুরু হয়েছে তারও আগে থেকে। তবে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনাটি মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং বেদনাদায়ক। প্রতিবছরই মহরমের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনে এই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ হয়।

এছাড়াও আশুরার দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা গুলোর মধ্যে রয়েছে

• হযরত আদম (আ.) এর পৃথিবীতে অবতরণ
• হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা যাত্রা শুরু এবং বন্যার সমাপ্তি ছিলো আশুরা কেন্দ্রিক
• হযরত ইব্রাহিম (আ.) অগ্নিকাণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া
• হযরত দাউদ (আ.) এর বিজয় লাভ জালুম বাহিনীর উপর
• হযরত আইয়ুব (আ.) এর রোগ মুক্ত হওয়া
• হযরত ঈসা (আ.) কে আসমানে পুনরায় তুলে নেওয়া

উপরোক্ত ঘটনা গুলিও আশুরা কেন্দ্রিক। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে যে আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ৪ টি মাস সম্মানিত। হাদিস শরীফেও মহরমকে মহান আল্লাহ তাআলার মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেটি খুবই মর্যাদা পূর্ণ। এই ৪ টি মাস গুলি হল জিলকদ, জিলহজ, মহরম ও রজব। (সূরা-৯ তওবা, আয়াত ৩৬)

আশুরার রোজা বা আমল

অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এই দিনটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে সিয়াম বা রোজা পালন করা। এই আমলটি সব নবীর সময়ই ছিল। এমনকি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আশুরার রোজা পালন করতেন। আমি ইতিমধ্য উপরে সেই ঘটনাটি উল্লেখ করেছি যে কখন থেকে মহানবী (সা.) এই রোজা পালন শুরু করেন। তবে ইহুদীদের সাথে যাতে সাদৃশ্য না হয়ে যায় তাই তিনি মহরমের ৯-১০ অথবা ১০-১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র মাহে রমজানের রোজার পর সবচািতে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ সিয়াম হচ্ছে মহরমের সিয়াম। এমনকি ফজিলতপূর্ণ এই মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য মাস অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম ও আবু দাউদ)

এ ব্যাপারে রাসুল বলেন আশুরা রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী মহান আল্লাহ তা’আলা এর উসিলায় অতীত জীবনের ১ বছরের গুনাহ হওয়া মাফ করে দিবেন

এমনকি তিনি আরো উল্লেখ করেন যে রমজানের রোজার পর মহরমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। ঠিক যেমনটা ফরজ নামাজগুলো আদায় করার পর শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ বেশি ফজিলত বা মর্যাদা পূর্ণ। (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ)

আরো হাদিসগুলোতে বর্ণনা পাওয়া যায় যে রাসুল ৪ টি কাজ জীবনে কখনো পরিত্যাগ করেননি। আর সেগুলো হল মহরম অর্থাৎ আশুরার রোজা, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশে রোজা, আইয়ামএ বিদের রোজা, ফরজ নামাজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া। আশা করি আপনারা এখন অনেকটাই ধারণা পেয়েছেন যে আশুরা কি এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে।

মুসলিমদের জন্য আশুরার দিনের আরও আমল

আশুর্ কি বা আশুরার ইতিহাস জানার পাশাপাশি আমাদেরকে আশুরার আমল সম্পর্কেও জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনটির মাধ্যমে আমরা আরো অনেক বেশি মহান আল্লাহ তাআলার রহমত পেতে পারি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূল এরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি মহরমের ১০ অর্থাৎ আশুরার দিনে পরিবারের মধ্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করবে মহান আল্লাহতালা তাকে পুরো বছরের জন্য রিযিক বৃদ্ধি বা রিজিকে বরকত দান করবেন। (তারবানি- ৯৩০৩)।

উপরিক্ত হাদীসটি সম্পর্কে অনেক মুহাদ্দিস দ্বিমত আপত্তিজনক মন্তব্য করলেও অনেক মুহাক্কিক আলেমগণ উক্ত হাদিসকে আমলযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাই উক্ত দিনকে কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পাশাপাশি যদি পরিবারের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে তবে সেটি শরীয়তে নিষেধ নাই। তবে মনে রাখতে হবে সেটি যেন অবশ্যই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না হয়ে যায়।

মহরম বা আশুরার ইতিহাসের গ্রুপের সর্বশেষ যুক্ত হচ্ছে কারবালার শাহাদাতের ঘটনা। এইদিনে হযরত হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে অকল্যাণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধ লড়াই করে আমাদের জন্য এক আদর্শিক শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। আমাদের মধ্যেও বিজয়ের চেতনা জাগ্রত করে দিয়েছেন। প্রতিবছরে ঘুরেফিরে ফজিলতপূর্ণ আশুরার দিনর আমরা সেই বিষয়গুলো স্মরণ করি। আশা করি আপনারা এখন বুঝতে পেরেছেন আশুরা কি, আশুরার ইতিহাস এবং আশুরার আমল সম্পর্কে। মহান আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে এই দিনের আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আশুরা কি | এর তাৎপর্য ও আশুরার ইতিহাস

আপডেট সময় : ১০:২৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

মুসলমানদের ধর্মীয় দিন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন আশুরা কি এবং এর ইতিহাস তাৎপর্য নিয়ে আজকে আলোচনা করব। এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে দশ মহরম। ইসলামিক পরিভাষায় যেটা দ্বারা বোঝায় মহরম মাসের ১০ তারিখ। আশুরার তাৎপর্য হিজরি সনের মহরম মাসকে আরো অনেক বেশি স্মরণীয় করেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা এই দিনটাকে আরো অনেক বেশি মহিমান্বিত করেছে।

আশুরা কি ও আশুরার ইতিহাস

মহরম মাসের ১০ তারিখের এই দিনটি সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই এর ইতিহাস সম্পর্কে আগে জানতে হবে। এই আশুরার ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিরাউনের অত্যাচার থেকে হযরত মুসা (আ.) নিষ্কৃতি লাভ করা। আশুরার এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিরাউনকে তার সৈন্য বাহিনীর সহ লোহিত সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর উষালগ্ন থেকেই আশুরার দিনগুলিতে ঘটে গেছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা। চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেই তাহলেই আপনারা বুঝতে পারবেন আশুরা কি এবং কেন এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকেই হয়তো বা মনে করেন ফেরাউন তার সৈন্যদলসহ নীল নদে ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মধ্যে এই ধারণা টি ভূল। বরং তাকে বিশাল সৈন্যে বহন সহ ডুবিয়ে দিয়ে সারা পৃথিবীবাসীকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে একটি হাদিসও রয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদিনা যান তখন তিনি সেখানকার ইহুদি সম্প্রদায়েরকে আশুরার রোজা পালন করতে দেখেন। প্রিয় নবী (সা.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে তোমরা কেন রোজা পালন করছো। উত্তরে ইহুদীরা বলে যে এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ.) এবং বনী ইসরাইলকে রক্ষা করেছিলেন ফেরাউনের অত্যাচার থেকে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মূসা আলাইহিস সাল্লাম আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। এই কথা শুনে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) এরশাদ করেন যে হযরত মূসা (আ.) এর এই কৃতজ্ঞতা অনুসরণে তাদের চাইতে আমরা বেশি হকদার। তাই তিনি মহরমের দশ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং আমাদেরকেও তা পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)

আশুরা কি এই পর্বে আমরা শুধুমাত্র একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে। পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আপনারা সামনে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। উপরোক্ত হাদিসের আলোকে এটি আমরা বুঝতে পারি যে হযরত মূসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচার থেকে আশুরার দিনে রেহাই পেয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি হাদিস গ্রন্থেই এটি সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু অনেকের মধ্যে এই ভ্রান্ত ধারণা আছে যে পবিত্র আশুরার দিনকে তারা শুধুমাত্র কারবালার ইতিহাস কি বুঝে থাকে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে মহরমের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। অর্থাৎ কারবালার ইতিহাসের মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনার আগে থেকেই ঐতিহ্যবাহী ভাবে স্বীকৃত।

এর কারণ হচ্ছে কারবালার যু – দ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরীর ১০ মহরমে। আশুরা রোজার প্রচলন শুরু হয়েছে তারও আগে থেকে। তবে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনাটি মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং বেদনাদায়ক। প্রতিবছরই মহরমের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনে এই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ হয়।

এছাড়াও আশুরার দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা গুলোর মধ্যে রয়েছে

• হযরত আদম (আ.) এর পৃথিবীতে অবতরণ
• হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা যাত্রা শুরু এবং বন্যার সমাপ্তি ছিলো আশুরা কেন্দ্রিক
• হযরত ইব্রাহিম (আ.) অগ্নিকাণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া
• হযরত দাউদ (আ.) এর বিজয় লাভ জালুম বাহিনীর উপর
• হযরত আইয়ুব (আ.) এর রোগ মুক্ত হওয়া
• হযরত ঈসা (আ.) কে আসমানে পুনরায় তুলে নেওয়া

উপরোক্ত ঘটনা গুলিও আশুরা কেন্দ্রিক। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে যে আকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ৪ টি মাস সম্মানিত। হাদিস শরীফেও মহরমকে মহান আল্লাহ তাআলার মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। যেটি খুবই মর্যাদা পূর্ণ। এই ৪ টি মাস গুলি হল জিলকদ, জিলহজ, মহরম ও রজব। (সূরা-৯ তওবা, আয়াত ৩৬)

আশুরার রোজা বা আমল

অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এই দিনটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে সিয়াম বা রোজা পালন করা। এই আমলটি সব নবীর সময়ই ছিল। এমনকি আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আশুরার রোজা পালন করতেন। আমি ইতিমধ্য উপরে সেই ঘটনাটি উল্লেখ করেছি যে কখন থেকে মহানবী (সা.) এই রোজা পালন শুরু করেন। তবে ইহুদীদের সাথে যাতে সাদৃশ্য না হয়ে যায় তাই তিনি মহরমের ৯-১০ অথবা ১০-১১ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র মাহে রমজানের রোজার পর সবচািতে গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ সিয়াম হচ্ছে মহরমের সিয়াম। এমনকি ফজিলতপূর্ণ এই মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য মাস অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম ও আবু দাউদ)

এ ব্যাপারে রাসুল বলেন আশুরা রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী মহান আল্লাহ তা’আলা এর উসিলায় অতীত জীবনের ১ বছরের গুনাহ হওয়া মাফ করে দিবেন

এমনকি তিনি আরো উল্লেখ করেন যে রমজানের রোজার পর মহরমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। ঠিক যেমনটা ফরজ নামাজগুলো আদায় করার পর শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ বেশি ফজিলত বা মর্যাদা পূর্ণ। (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমদ)

আরো হাদিসগুলোতে বর্ণনা পাওয়া যায় যে রাসুল ৪ টি কাজ জীবনে কখনো পরিত্যাগ করেননি। আর সেগুলো হল মহরম অর্থাৎ আশুরার রোজা, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশে রোজা, আইয়ামএ বিদের রোজা, ফরজ নামাজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া। আশা করি আপনারা এখন অনেকটাই ধারণা পেয়েছেন যে আশুরা কি এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে।

মুসলিমদের জন্য আশুরার দিনের আরও আমল

আশুর্ কি বা আশুরার ইতিহাস জানার পাশাপাশি আমাদেরকে আশুরার আমল সম্পর্কেও জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনটির মাধ্যমে আমরা আরো অনেক বেশি মহান আল্লাহ তাআলার রহমত পেতে পারি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূল এরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি মহরমের ১০ অর্থাৎ আশুরার দিনে পরিবারের মধ্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করবে মহান আল্লাহতালা তাকে পুরো বছরের জন্য রিযিক বৃদ্ধি বা রিজিকে বরকত দান করবেন। (তারবানি- ৯৩০৩)।

উপরিক্ত হাদীসটি সম্পর্কে অনেক মুহাদ্দিস দ্বিমত আপত্তিজনক মন্তব্য করলেও অনেক মুহাক্কিক আলেমগণ উক্ত হাদিসকে আমলযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাই উক্ত দিনকে কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পাশাপাশি যদি পরিবারের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করে তবে সেটি শরীয়তে নিষেধ নাই। তবে মনে রাখতে হবে সেটি যেন অবশ্যই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না হয়ে যায়।

মহরম বা আশুরার ইতিহাসের গ্রুপের সর্বশেষ যুক্ত হচ্ছে কারবালার শাহাদাতের ঘটনা। এইদিনে হযরত হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে অকল্যাণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধ লড়াই করে আমাদের জন্য এক আদর্শিক শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। আমাদের মধ্যেও বিজয়ের চেতনা জাগ্রত করে দিয়েছেন। প্রতিবছরে ঘুরেফিরে ফজিলতপূর্ণ আশুরার দিনর আমরা সেই বিষয়গুলো স্মরণ করি। আশা করি আপনারা এখন বুঝতে পেরেছেন আশুরা কি, আশুরার ইতিহাস এবং আশুরার আমল সম্পর্কে। মহান আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে এই দিনের আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।