ভ্যাট ও ট্যাক্স এর মধ্যে পার্থক্য কি

- আপডেট সময় : ০২:০২:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে
আজকে আমরা জানবো অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভ্যাট ও ট্যাক্স এর মধ্যে পার্থক্য কি তা সম্পর্কে। আমরা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কেনাকাটায় কিংবা অর্থ লেনদেনের সরকারকে কিছু পরিমাণে অর্থ প্রদান করি। কিন্তু অনেকেই হয়তোবা জানিনা কোন ধরনের অর্থ প্রদানকে কি বলা হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা ভ্যাট ও ট্যাক্স সম্পর্কে তা যাবতীয় বিষয় জানতে পারবেন।
ভ্যাট এর ইংরেজি হচ্ছে Value Added Tax বাংলায় বলা হয় মূল্য সংযোজন কর বা মূশক। অপরদিকে ট্যাক্স হচ্ছে এমন একটি বিষয় যেটি মানুষের আয়ের উপর প্রদান করা হয়ে থাকে। যদিও ট্যাক্সের কয়েকটি প্রকার হয়েছে যেটি আমরা নিচের বিস্তারিত আলোচনা করব।
ভ্যাট কাকে বলে
ভ্যাট বা ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (Value Added Service) হচ্ছে পণ্য ক্রয় এর উপর প্রদানকৃত অর্থ। যখন কোন ব্যক্তি পণ্য অথবা সার্ভিস গ্রহন করে তখন যেই মূল্যের পণ্য বা সার্ভিস ক্রয় করে সেই মূল্যের উপর নির্ধারিত অর্থ সরকারকে প্রদান করাই হচ্ছে ভ্যাট। একটি উদাহরণ দিলে আপনারা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।
বিভিন্ন শোরুম থেকে কাপড়, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মোবাইল ইত্যাদি যখন আমরা ক্রয় করি সেখানে সে পণ্যের মূল দামের উপর বাড়তি একটি চার্জ বসানো হয়। ধরুন আপনি বাজার হতে ১০ হাজার টাকা দামের একটি পণ্য ক্রয় করেছেন। এখন এই ১০ হাজার টাকার মূল্যের উপর সরকারের নির্ধারিত হারে আপনাকে ভ্যাট প্রদান করতে হবে। এভাবে আপনি যত টাকার সার্ভিস কিংবা পণ্য কিনবেন ঠিক সেই মূল্যের উপর নির্ধারিত ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
মোবাইলের ইন্টারনেট মিনিট প্যাকেজ কেনার সময় নির্ধারিত দামের বাইরেও ভ্যাট, এসডি ইত্যাদি প্রদান করতে হয়।
ট্যাক্স কাকে বলে
ভ্যাট ও ট্যাক্স এর মধ্যেও পার্থক্য জানার আগে আমাদেরকে সংজ্ঞা গুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। তাইতো আমি সবকিছু সবিস্তারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
ট্যাক্সের বেশ কয়েকটি প্রকার রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইনকাম ট্যাক্স (income tax), বিক্রয় ট্যাক্স (sales tax), সম্পত্তি ট্যাক্স, কর্পোরেট ট্যাক্স ইত্যাদি। তবে ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কে আলোচনা করলেই আপনারা বাকিগুলো সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। একজন ব্যক্তি যখন তার আয়ের উপর নির্ধারিত হারে সরকারকে অর্থ প্রদান করে তখন সেটিকে ইনকাম ট্যাক্স বলা হয়। তবে নির্ধারিত কিংবা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার কোন ট্যাক্স নাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন মানুষ যদি বাৎসরিক ৩৫০,০০০ টাকা বা তার কম অর্থ আয় করে তাহলে তাকে কোন ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না। তবে এই আয় যদি ৩৫০,০০০ টাকার বেশি হয় তাহলে পরবর্তী ১ লক্ষ টাকার জন্য ৫% হারে ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। এভাবে আয় যত বাড়বে তার ট্যাক্সের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
ভ্যাট ও ট্যাক্স এর মধ্যে পার্থক্য কি
১। এই দুইয়ের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে ভ্যাট প্রদান করা হয় পণ্য ক্রয় এর উপর এবং ট্যাক্স প্রদান করা হয় ইনকামের উপর। যার মানে ভ্যাটকে পরোক্ষ কর বলতে পারি এবং অপরদিকে ট্যাক্সকে বলতে পারি প্রত্যক্ষ কর।
২। কোন ব্যক্তি যখনই পণ্য ক্রয় বা সেবা গ্রহণ করবে তখনই তাকে মূল মূল্যের সাথে ভ্যাট প্রদান করতে হবে। অবশ্য মার্কেটে বিভিন্ন পণ্যের সাথে ভ্যাট যুক্ত করে দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে ক্রেতার সুবিধা হয় পণ্য ক্রয় করতে।
অপরদিকে সারা বছরের আয়ের উপর নির্ধারিত হয় ইনকাম ট্যাক্স বাট। আবার কেউ যদি কোন সম্পত্তি বিক্রি করে, ব্যবসায় অধিক পরিমাণে লাভ হয় তাহলেও তাকে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হতে পারে।
৩। যাদের কাছ থেকে পণ্য বা সার্ভিস ক্রয় করে থাকে তাদেরকে ভ্যাটের টাকা দিলে তারা সেই টাকা সরকারকে পরিশোধ করে থাকে। অপরদিকে বাৎসরিক আয়ের উপর ইনকাম ট্যাক্স নিজে পরিশোধ করতে হয়।
৪। বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (Business Identification Number) বা বিন নাম্বারের মাধ্যমে একজন ব্যবসায়ের প্রতিষ্টান ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে পারে। আবার একজন ব্যক্তি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (Tax Identification Number) বা টিনের মাধ্যমে নিজের ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারেন।
৬। পণ্য ও সেবার ধরনের ওপর ভ্যাটের টাকা বিভিন্ন রকম হতে পারে। অপরদিকে ইনকাম ট্যাক্সের হার নির্ভর করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক আয়ের উপর।
আশা করি আপনারা এবার ভ্যাট ও ট্যাক্সের মধ্যেও পার্থক্য কি সেটা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
ভ্যাট ও ট্যাক্স সম্পর্কিত আরো তথ্য
আমি আগেই উল্লেখ করেছে বর্তমান অর্থাৎ ২০২৫ সালের নিয়ম অনুসারে একজন ব্যক্তির বাৎসরিক তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় বা তার কম আয় হলে কোন ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করতে হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তির আয়ে তার চাইতে বেশি হয় তাহলে অবশ্যই নির্ধারিত হারে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। আর এই ট্যাক্সের অর্থ সরকারকে দেওয়ার জন্য TIN আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ঘরে বসে অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। এমনকি বাৎসরিক ট্যাক্স প্রদানের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে। উক্ত সময়ের ভিতরে যদি ট্যাক্স যোগ্য কোন ইনকাম না থাকে তাহলে একজন ব্যক্তি জিরো রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
ইনকাম ট্যাক্স কি সেটা জানার পর একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের প্রাপ্ত অর্থ অযথা সময় পরিশোধ করা। ভ্যাট ও ট্যাক্স এর মধ্যে পার্থক্য পার্থক্য কি সম্পর্কিত আরও তথ্য জানার থাকলে কমেন্টসে জানান অথবা আমাদের ফেসবুক পেজের সরাসরি নক দিন।